বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের লামা উপজেলা, যেখানে প্রকৃতির অমোঘ আহ্বান অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। সুখিয়া ভ্যালি (Sukhiya Valley), মাতামুহুরি নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এক অপরূপ পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে প্রকৃতি প্রেমীরা হারিয়ে যাবেন সবুজ পাহাড় আর শান্ত নদীর সৌন্দর্যে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে সুখিয়া ভ্যালি আপনার ভ্রমণ তালিকায় স্থান পেতে পারে।
সুখিয়া ভ্যালিতে কি দেখবেন?
- সুখিয়া ও দুখিয়া পাহাড়ের মিলনমঞ্চ – মাতামুহুরি নদীর দুই পাশে অবস্থিত সুখিয়া ও দুখিয়া পাহাড় যেন প্রকৃতির দুই প্রেমিক। এই দুই পাহাড়ের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- মাতামুহুরি নদী – নদীর স্রোত আর তার চারপাশের সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। নদীর তীরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
- পাহাড়ি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত – পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সকালের সূর্যোদয় কিংবা সন্ধ্যার সূর্যাস্ত উপভোগ করা আপনার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তুলবে।
- সবুজের সমারোহ – সুখিয়া ভ্যালি থেকে ঢেউ খেলানো সবুজ প্রান্তররের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
ভ্রমণের সেরা সময়
শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) সুখিয়া ভ্যালী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কিভাবে সময় কাটাবেন?
- মাচাং ঘরে থাকা: সুখিয়া ভ্যালীতে সম্প্রতি স্থাপিত মাচাং ঘরগুলো আপনাকে পাহাড়ি অভিজ্ঞতা উপহার দেবে।
- ফটোগ্রাফি: প্রকৃতির মোহনীয় দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করতে ভুলবেন না।
- নদীতে নৌকা ভ্রমণ: মাতামুহুরি নদীতে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকলে এটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
- স্থানীয় খাবার চেখে দেখা: স্থানীয় পাহাড়ি রান্নার স্বাদ নিতে পারেন।
সুখিয়া ভ্যালি যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। সেখান থেকে লামা-আলীকদম পথে জিপ, বাস বা সিএনজি করে সুখিয়া ভ্যালিতে যাওয়া যায়। সুখিয়া পাহাড়ের পাশে গাড়ি থেকে নেমে ৪০ মিনিটের মতো বিগিনার লেভেলের ট্রেক করে সুখিয়া ভ্যালি পৌছানো যাবে। চকরিয়া থেকে লোকাল বাসে লামা পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা, জীপ ভাড়া ৭০ টাকা, সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা জনপ্রতি। লামা বাজার থেকে সুখিয়া ভ্যালি এর দুরত্ব ১ কিলোমিটারের কিছু বেশী। লামা বাজার থেকে অটো রিক্সায় জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সুখিয়া পাহাড় পর্যন্ত যাওয়া যায়।
চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে চাইলে মিরিঞ্জা বাজারেও চলে যেতে পারবেন। রিজার্ভ গেলে ভাড়া পরবে ১৫০০ টাকার মতো। সেখান থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালিতে এক রাত থগেকে চাইলে পরের দিন বাইক নিয়ে সুখিয়া ভ্যালি যেতে পারেন। এতে করে আপনার এক ট্যুরে দুই ভ্যালি কভার করা সম্ভব।
কোথায় থাকবেন
সুখিয়া ভ্যালীর আশেপাশে থাকার জন্য বেশ কিছু মাচাং ঘর / জুমঘর রয়েছে। কিছু জুমঘরে ৫-৬ জন থাকা যাবে, ভাড়া পরবে ২০০০ টাকা তবে ৪ জন থাকলে ১৫০০-১৬০০ টাকা পরবে। কাপল থাকলে ভাড়া আরেকটু কমবে। আবার বড় কিছু জুমঘরও আছে যেখানে ১৫-২০ জন অনায়াসে থাকতে পারবেন, যেটার ভাড়া পরবে ৪০০০ টাকার কাছাকাছি।
কেউ চাইলে তাবুতেও থাকতে পারবেন। আপনি চাইলে নিজস্ব তাবু নিয়ে যেয়ে থাকতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে তাদের ওয়াচ টাওয়ারে তাবু পিচ করতে হবে। তখন তাদেরকে ১৫০ টাকা পে করতে হবে। আর যদি তাবুও তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেন সেক্ষেত্রে সর্বমোট ৩০০ টাকা দিতে হবে। তাবু ২-৩ জনের মতো থাকা যাবে।
এছাড়া লামা উপজেলা সদরেও কিছু সাশ্রয়ী থাকার ব্যবস্থা আছে। আপনি চাইলে মিরিঞ্জা অথবা মারাইংছা যেয়েও থাকতে পারবেন।
খাওয়া দাওয়া
খাবারের জন্যে জনপ্রতি ৭০০-৭৫০ টাকার প্যাকেজ আছে। দুপুরের ব্রয়লার মুরগি দিয়ে ভাত, সাথে সবজি-ডাল। বিকেলে হাল্কা নাস্তা, রাতে দেশী মুরগি / মাছ দিয়ে ভাত,সব্জি, ডাল। চাইলে রাতের মেনু পরিবর্তন করে বার-বি-কিউ করতে পারেন, তখন চিকেনের সাথে আনলিমিটেড পরাটা থাকবে। আর কেউ যদি গরুর মাংস নিতে চান সেক্ষেত্রে রিসোর্টে কথা বলে নিবেন, তখন কস্ট কিছুটা বাড়তে পারে। সকালে ডিম/চিকেন খিচুড়ি থাকবে।
বিশেষ পরামর্শ
- পাহাড়ে চলাফেরার সময় সতর্ক থাকুন।
- স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি সম্মান দেখান।
- প্রয়োজনীয় ওষুধ, জুতো, হালকা খাবার, এবং পর্যাপ্ত পানি সঙ্গে রাখুন।
সুখিয়া ভ্যালি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার ভাণ্ডার, তেমনি অন্যদিকে এটি পর্যটনপ্রেমীদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ আশ্রয়স্থল। শহরের কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য সুখিয়া ভ্যালী হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।