প্রায় সাড়ে আট হাজার ফুট উচ্চতায় লেপচা অধ্যুষিত গ্রাম রিশপ (Rishyap) যা লাভা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ পাহাড়ের ধাপে ধাপে নানা রকমের ফুলে ঢাকা ছোট্ট সাজানো গ্রাম রিশপ। রিশপ নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ১১০ কিলোমিটার এবং কালিম্পং থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে ৮২৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। রিশপ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ের মাথায় একলা গাছে’। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে চাষের জমি দেখতে অপূর্ব লাগে। রিশপকে ঘিরে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু, সিনিয়ালচু, পান্ডিম—সহ নানান শৃঙ্গ। সারা রিশপে সবসময় অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। জঙ্গলের মধ্যে ট্রেক করে যেতে পারেন দেড় কিলোমিটার দূরের টিফিনদাঁড়া ভিউপয়েন্ট। সান্দাকফুর পর রিশপের টিফিনদাঁড়া হল পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে সূর্যোদয়, সূর্যান্ত দেখার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। পাখি দেখা-পাখির ছবি তোলার জন্য অন্যতম সেরা গন্তব্য হল রিশপ। গোটা গ্রাম ঘুড়ে বেরালেই চোখে পড়বে জার্ক সাইডেড ফ্ল্যাই ক্যাচার, ভার্ডিটার ফ্ল্যাইক্যাচার, গ্রিন ব্যাকেট টিট, রুফাস সিবিয়া প্রভৃতি নানা চেনা-অচেনা পাখি। নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এই গ্রামের চারিদিকে জঙ্গল। মাঝেমধ্যেই সবুজ উপত্যকায় এসে আটকে পড়ে মেঘ৷ তখন গোটা উপত্যকা জুড়ে চলে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা।
রিশপ এর রাস্তা এখনও কাঁচা। এখানে থাকার মধ্যে একটা মধ্যযুগীয় অনুভূতির মজা আছে। রিশপ যেহেতু ছোট একটা গ্রাম, তাই লাভার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল জায়গাটা। বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহও এখানকার অন্যতম প্রধান সমস্যা। জলের সঙ্কটেও ভোগেন স্থানীয়েরা। কাজেই পর্যটকদের বার বার করে বলে দেওয়া হয়, এখানে গিয়ে জলের অপচয় না করতে।
জায়গাটার মজা হল, কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও ভারত আর নেপাল মিলিয়ে আরও প্রায় গোটা দশেক পর্বতচূড়া দেখা যায় এখান থেকে। টিফিনদাড়া ভিউ পয়েন্ট থেকে পাহাড়ের প্যানোরমা ক্যামেরাবন্দি করার সুযোগ মিস করবেন না। যার নীচের অংশ থেকেই আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে পাইনের বন। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রির ভিউ পাওয়া যায়। কিলোমিটার দুয়েক হেঁটে উঠতে হয়।
নাথুলা আর জেলেপলা পাসের কিছুটা অংশও চোখে পড়ে রিশপ থেকে। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার অন্যতম সেরা জায়গা রিশপ। যদি প্ল্যান করে পূর্ণিমার সময় যেতে পারেন, আরও ভাল। পাহাড়ি জায়গায় যে কোনও সময়েই আকাশের মুখ ভার হয়ে যেতে পারে। তবে বর্ষার সময়টা বাদ দিয়ে যাওয়াই ভাল। সূর্যাস্তের পর আশপাশের পাহাড়ে জোনাকির মতো আলো জ্বলে ওঠার দৃশ্যও দারুণ! যাঁরা রিশপে যান, তাঁরা সাধারণত প্যাকেজে লাভা-লোলেগাঁও কিংবা পেডংকে রাখেন। কয়েক কিলোমিটারের রাস্তা। রিশপ থেকে লাভা ট্রেক করেও যান অনেকে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঘণ্টাখানেকের ডাউনহিল ট্রেক। রাস্তা বড্ড এবড়োখেবড়ো, তাই ভাল জুতো নিয়ে যাওয়া দরকার অবশ্যই। রিশপ থেকে নেওড়া ভ্যালি রিসর্ট বেশি দূর নয়। চাইলে সেখানেও একদিন থেকে যেতে পারেন।