বাইক্কা বিল (Baikka Beel) মৌলভীবাজার জেলার চায়ের স্বর্গরাজ্য শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্বদিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম। শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এবং হাইল হাওরের পূর্ব পাশেই প্রায় ১০০ হেক্টর জলাভূমি নিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের এই বাইক্কা বিল। বাইক্কা বিলের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী আর স্থানীয় পাখি। বিলের শুরুতেই দেখা যাবে দলে দলে পার্পল সোয়াম্প হেন বা কালেম। পাশেই হয়তো দেখবেন গ্রেট কর্মোরান্ট বা ছোট পানকৌড়ি, লিটল কর্মোরান্ট বা বড় পানকৌড়ির দল। শুধু পাখিই নয়, হাওরে মাছের রাজ্যেও রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ। আইড়, মেনি, কই, ফলি, পাবদা, বোয়াল, রুই, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও অভয়াশ্রম। এ ছাড়া এই বিলের দাপুটে পাখিরা হলো শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালাসী কুড়া ঈগল, গুটি ঈগল ইত্যাদি। শীতের এ সময়ে আরও দেখা মিলবে বিলের অতিথি পাখি সরালি, মরচেরং ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস আর ল্যাঞ্জা হাঁসের ভেসে চলা।
বিলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দূরত্বে দেখা মিলবে মেটেমাথা টিটি, কালাপাখা ঠেঙ্গী গেওয়ালা বাটান ইত্যাদি। শীত এখনো জমে ওঠেনি। তবে জমে উঠতে শুরু করেছে পাখির মেলা। বিলের জলে পরিযায়ী পাখি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ভ্রমণপিপাসুদের বিলের পাখি উপভোগের জন্য দুটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ আছে। বাইক্কা বিলে প্রায় ৯৮ প্রজাতির মাছ ও ১৬০ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে।
কখন ভ্রমণে যাবেন
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় বাইক্কা বিল ভ্রমণের জন্য সেরা। এসময় এখানে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে। জলজ উদ্ভিদ, মাছপ্রেমীদের জন্য এটা সেরা মৌসুম।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেল পথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা।
শ্রীমঙ্গল থেকে বাইক্কা বিলে যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো পরিবহন সেবা নেই। তাই যেতে হবে নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা গাড়ি করে। শ্রীমঙ্গল থেকে সারাদিনের জন্য বাইক্কা বিলে যাওয়া আসার জন্য সিএনজি চালিত বেবি টেক্সির ভাড়া পড়বে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। আর জিপ কিংবা মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৫শ’ ২ হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরের সামনে থেকে লোকাল অটোরিকশায় চড়ে যেতে হবে বরুনা বাজার। জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা। সেখান থেকে অটো রিকশাতেও যাওয়া যায় বাইক্কা বিল।
কোথায় থাকবেন
বাইক্কা বিলের খুব কাছাকাছি থাকার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। সারাদিন ঘুরে শ্রীমঙ্গল শহরে এসে রাত যাপন করতে পারবেন। শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ সড়কে টি-রিসোর্ট (ফোনঃ ০১৭১২-৯১৬০০১ )। অন্যান্য থাকার জায়গার মধ্যে আছে— হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান (পাঁচ তারকা) – ০১৫৫২-৬৮৩৪৫৪, রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (০১৯৩৮-৩০৫৭০৬), টি টাউন রেস্ট হাউস, হোটেল প্লাজা (৮৬২৬৫২৫, ০১৭১১-৩৩২৬০৫), বি.টি.আর.আই – ০৮৬২৬-৭১২২৫ ইত্যাদি। এসব হোটেল ও রিসোর্টের ভাড়া ৫শ’ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫শ’ টাকা।
এছাড়া শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে চমৎকার দুটি রিসোর্ট হল নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্ট (০১৭১৫০৪১২০৭) এবং নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকো রির্সোট (০১৭১৬৯৩৯৫৪০)।
খাওয়া দাওয়া
ক্যাম্প করলে সঙ্গে করে চাল ডাল নিয়ে যেতে হবে, আশে পাশে ভালো কোন বাজার নেই। যদি ফিরে আসার প্ল্যান থাকে তাহলে হালকা চা, নাশতা, বিস্কুট, পাউরুটি নিলে খুব ভালো হয়।