পাথারিয়া পাহাড় মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত, যার পূর্ব নাম আদম আইল। এই পাহাড়ের উপর থেকে পতিত পানিতেই সৃষ্টি হয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এই পাহাড়, সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার, কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
পাথারিয়া পাহাড়ে আছে ঝেরঝেরি, কাখড়া ছড়ি, ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি আর ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝর্ণা। ঝর্ণাগুলোর এমন আহলাদি নাম দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। শুধু নামকরণেই আলাদা টান নেই। ঝর্ণাগুলো পাথারিয়া পাহাড়কে সাজিয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্য্য। উঁচু-নিচু টিলা সবুজ বৃক্ষরাজিতে ছাওয়া পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা প্রবাহমান পানি ছড়া দিয়ে সমতলে নেমে আসছে। ছড়ার পানি ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে। দুর্গম এই ছড়া দিয়ে হেঁটে ঝরনার কাছে যেতে যত বিপত্তি ক্লান্তি আসুক না কেন, ছড়ার স্বচ্ছ শীতল পানি, চারদিকের সবুজ প্রকৃতি, বনফুল, শাসনি লেবুর সুবাস, পাখি ও ঝিঁ ঝিঁ পোকার কলতান সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়।
এখানে পূর্বে প্রচুর কমলা লেবুর গাছ থাকলেও বর্তমানে তার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এই বনাঞ্চলটি আগর-আতর কাঠ গাছের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে এখানে যেসব প্রাকৃতিক উদ্ধিদ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছেঃ নাগকেশর, পালান, বাঁশ, বেত, কালাকস্তুরী বা মুশকদানা ও বনঢ্যাড়শ।
খনিজসম্পদের মধ্যে পাথারিয়া পাহাড়ে আছে একটি তেলকূপ। ১৯৩৩ সালে তৎকালীন সরকার বার্মা ওয়েল কোম্পানিকে (বিওসি) দিয়ে তেল উত্তোলনের ব্যবস্থা করে। পরবর্তীকালে তেলের পাইপ ফেটে যায় এবং স্থানীয় পুরো এলাকা তেলের জোয়ারে ভাসতে থাকে তিনদিন। এই তেলকূপ বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও এখনও এর ভেতর তেলের মজুদ আছে। বন্ধ করে রাখা কূপের ঢাকনার ওপর কান পাতলে শোনা যায় মাটির নিচে তেলের গম গম শব্দ।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেনে এবং বাসে দুই মাধ্যমেই যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে কুলাউড়ায় নেমে তারপর বাসে অথবা সিএনজি নিয়ে বড়লেখায় নেমে ডিমাই হয়ে পাথারিয়ায় (Patharia Pahar) যেতে হবে। আর বাস সার্ভিসে যেতে হলে ফকিরাপুল-সায়েদাবাদ থেকে রূপসী বাংলা, শ্যামলী পরিবহন এবং মহাখালী থেকে এনা পরিবহনেও যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
এখানে জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাছাড়া আপনি চাইলে সিলেট কিংবা মৌলভীবাজার শহরের হোটেলেও থাকতে পারেন।