বোয়ালিয়া ট্রেইল (Boalia Trail) চট্টগ্রামের মিরসরাই এ অবস্থিত সকল ট্রেইলগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয়। চারিদিক ঘন জঙ্গলে ঘেরা, উচুঁ নিচু আঁকাবাঁকা পথ ও সম পিচ্ছল পাথর পেরিয়ে ঝর্ণা দর্শনে আপনিও মুগ্ধ হয়ে ভূলে যাবেন দূর্গম পথের সব ক্লান্তি। সকল বাধা উপেক্ষা করে, পাহাড়, জল, পাথর, গভীর কুপ পেরিয়ে যখন ঝর্ণা জলে শরীর ভেজাবেন, সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমেষে। আর এই বিপদজ্জনক দূর্গম ঝিরি পথটাই এই সব ঝর্ণাকে করেছে আরও আকর্ষনীয়।
এই ট্রেইলে বোয়ালিয়া, বাউশ্যা, লটকান, কেম্বাতলী, কলাতলী, পালাকাটা, উঠান, অমরমানিক্য, ৩ নং, নয়াতিখুম ঝর্না সহ অনেক ক্যাডসেটের দেখা মিলবে। তবে সব ঝর্না একই সাথে দর্শন করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, যদি খুব ভোরবেলা থেকে ট্রেকিং শুরু করেন আর সময় খুবই স্বল্প ব্যয় করেন, তবে একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
বোয়ালিয়া ঝর্ণা
মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে ঝিরি পথ ধরে এগুলেই সামনে পরবে এই ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ও মূল ঝর্ণা বোয়ালিয়া ঝর্ণা। তবে ট্রেইলটা খুব সাদামাটা। যদি বৃষ্টি থাকে বা ঝর্ণায় পানি বেশি থাকে তবে একটু জায়গা সাঁতার কেটে যেতে হয়। তাই ভেতরে যেতে ভয় পেলে পাশেই পাহাড়ে উঠে ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাবেন। তবে এই ঝর্ণার সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হল ঝর্ণার ভেতেরে একটু ফাকা জায়গা রয়েছে। এক কথায় ঝর্ণার পেটের ভেতর প্রবেশ করে জল ভেদ করে প্রকৃতিকে নতুন রুপে দেখতে পাবেন।
অন্যান্য ঝর্ণা
এবার মূল ট্রেইলে প্রবেশ করতে চাইলে ফিরে আসতে হবে কিছুটা। তারপর আবার পাহাড়ি পথ দিয়ে হেটে যেতে হবে আরেকটি ঝিরি পথের উদ্দেশ্যে। সেই ঝিরি পথে রয়েছে বড় বড় পাথর আর চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট ছড়া। এভাবে হাটতে হাটতে সামনেই ডানপাশে ছোট্ট একটা লুকনো ঝিরিপথ দেখতে পাবেন। আপনার সাথে গাইড না থাকলে মিস করে যাবেন। ছোট ঝিরি পথ দিয়ে প্রবেশ করলে পড়বে পালাকাটা খুম বা শুকরমারা ঝর্ণা। এই ঝর্ণার বিশেষত্ব হল এর উপরে একটি গিরিখাত রয়েছে। তাইলে ঝর্ণার উপরে উঠে ভেতরে থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এরপর ছোট ঝিরি পথ থেকে বেড় হয়ে ডানপাশ দিয়ে এগিয়ে যাবেন। সামনেই চোখে পরবে উঠান ঢাল। উঠান ঢালটিকে দেখলে মনে হয় প্রকৃতি ক্লান্ত পথিকদের জন্য জল বিছানা বিছিয়ে রেখেছে৷ এত সুন্দর যা না দেখলে বর্ণনায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। এই ঢাল পার হতে বড় বড় পাথর চোখে পরবে। এই পথটা একটু কঠিন। খুব সাবধানে এগিয়ে যেতে হবে। তারপর কিছুটা পথ পারি দেবার পর এক জায়গা দেখবেন ঝিরিপথ দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটা অমরমানিক্য ঝর্ণা এবং আরেক পাশে ন হাইত্যেকুম বা নয়াতিখুম ঝর্ণা।
বোয়ালিয়া ট্রেইল যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেন ২ ভাবেই বোয়ালিয়া ট্রেইলে যাওয়া যায়। বোয়ালিয়া ট্রেইল যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোনো বাসে উঠে নামতে হবে মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড ভাড়া নিবে ৪৮০ টাকা। যারা খরচ সেভ করতে চান তারা ঢাকা থেকে ফেনীগামী স্টার লাইন অথবা এনা বাসে উঠতে পারেন। ঢাকা উত্তরা থেকে ভাড়া নিবে ৩০০ টাকা এবং সায়েদাবাদ থেকে ভাড়া নিবে ২৭০ টাকা। আর ফেনী মহিপাল থেকে চট্টগ্রাম গামী যেকোনো বাসে চড়ে মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড যাওয়া যায়। আর মহিপাল থেকে মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড বাস ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।
যদি আপনি চট্টগ্রাম শহর থেকে আসেন, চট্টগ্রাম শহর এর অলংকার মোড় থেকে চয়েস বাস মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড যায়। ভাড়া নেয় জন প্রতি ৮০ টাকা করে।
মিরসরাই বাস স্ট্যান্ড হতে মিরসরাই বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজের রাস্তা ধরে পূর্ব দীকে একটু হেটে গেলে দেখবেন সিনজি দাড়িয়ে আছে , সিনজিতে ঊঠে ব্র্যাক পোল্ট্রি ফিড কমপ্লেক্সের সামনে চলে যাবেন। ভাড়া ২০ টাকা। মূলত এখান থেকেই ট্রেকিং শুরু। নেমে ছড়া ধরে উত্তরদিকে হাঁটা শুরু করতে হবে পায়ে চলা পথ ধরে। একসময় চোখে পড়বে বোয়ালিয়া ঝর্ণা। ব্র্যাক পোল্ট্রি ফিড কমপ্লেক্সের সামনে থেকে গাইডও নিয়ে নিতে পারেন। ২০০-৩০০ টাকা নিবে।
খরচ
ঢাকা থেকে মিরসরাই ভাড়া ৪৮০ টাকা। কম খরচে আসতে চাইলে ফেনী পর্যন্ত আসুন। ফেনির ভাড়া ২৮০/- থেকে ৩০০/- এবং ফেনী থেকে মিরসরাই ৫০ টাকা।
খাবার খরচ
খাবার প্যাকেজ ৬০/- থেকে ১৫০/- মধ্যে। পছন্দমত প্যাকেজ বেছে নিন। তবে আগে অর্ডার করে যেতে হবে।